spot_img
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
HomeArchitectureবাংলাদেশ জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার: জাতিসংঘ মহাসচিব

বাংলাদেশ জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার: জাতিসংঘ মহাসচিব

বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে উল্লেখ্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সরকারি দায়িত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ জাতিসংঘের অনেক কর্মযজ্ঞে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে এবং সেই কারণে আমরা বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি।

বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে সে দেশের সেনাবাহিনী তরুণ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশের অভিযোজন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলার সক্ষমতার প্রশংসা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান নিম্ন আয়ের দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করলে গুতেরেস এ বিষয়ে বিশ্বসংস্থার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, এ জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করা উচিত, শাস্তিদান নয়।

হাছান মাহমুদ ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাতসহ চলমান বিশ্বের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মহাসচিবকে তার নেতৃত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাফায় সংঘাত এড়াতে সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব যেভাবে নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন, শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী তার প্রশংসা করেছে।

এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের ওপর বিশ্বের আলোকপাত বজায় রাখা, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন এবং রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে জাতিসংঘের জোরালো ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জাতিসংঘ মহাসচিব গত দশকে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন বৈঠকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহাসচিবকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ অনেক আগেই সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবিক সূচকসহ সব সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং গত কয়েক বছরে অনেক সূচকে ভারতকেও ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়েও ভারতকে বাংলাদেশ ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদানের অর্ধশত বছরপূর্তিতে আন্তোনিও গুতেরেসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান হাছান মাহমুদ।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ও মিশনের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এ দিন বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার যৌথ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এ সময় বক্তৃতায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম সর্বোচ্চ অবদান রাখা বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈদেশিক নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ সবসময় শান্তির প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের অগ্রভাগে রয়েছে।

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।

শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত নিহত সবার পরিবার ও স্বজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বময় সংঘাত ও সহিংসতার ক্রমাগত বৃদ্ধি শান্তির জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং এ কারণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই।

বক্তব্য শেষে হাছান মাহমুদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স ও অস্ট্রিয়ার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টেফান প্রিটেরহফারকে সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ২০২৩ সালে ৩৪টি দেশের ৬৪ জন আত্মদানকারী সামরিক, পুলিশ ও বেসামরিক শান্তিরক্ষীর নামফলকে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ অনুষ্ঠানের আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছ থেকে ২০২৩ সালে শহীদ বাংলাদেশের দুই শান্তিরক্ষীর পক্ষে ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ গ্রহণ করেন।

একই দিন বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ওআইসি সম্মেলন কক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিউইয়র্কে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরসনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকার জন্য তিনি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের প্রশংসা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখাইনে সংঘাত বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টায় ওআইসি রাষ্ট্রদূতদের সংহতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

ওআইসিভুক্ত দেশ সৌদি আরব, গাম্বিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইরান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, মিসর, ইন্দোনেশিয়ার জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধিরা সময়োপযোগী এ ব্রিফিংয়ের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার প্রশংসা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

দুই দিনের সরকারি সফরে নিউইয়র্কে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্যান্য বৈঠকে মিলিত হবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments