সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)—যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম শ্রমবাজার—সেখানে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় চরম বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটিতে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বসবাস করেন, যা ইউএই-র মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। রিয়েল এস্টেট, সেবা ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে তারা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন এবং নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জন্য ইউএই-তে ভিসা ইস্যু কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে গুরুতর প্রতিবন্ধকতা। আমিরাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভাষ্যমতে, বর্তমানে অন্য দেশগুলোর জন্য ভিসা নিয়মিত কার্যকর থাকলেও, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হঠাৎ স্থগিত অথবা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। নতুন ভিসা ইস্যু, পুরনো ভিসা নবায়ন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে ‘কোম্পানি ট্রান্সফার’—এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের জন্য কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এই অবস্থায় যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক ভালো বেতনের চাকরি পেয়েছেন, তারাও কোম্পানি পরিবর্তন করতে না পারায় সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারছেন না। এর ফলে অনেকেই পুরনো কোম্পানির ভিসা বাতিল হয়ে যাওয়ায় বৈধতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন।
৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় কূটনৈতিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও, বাস্তবে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশি প্রবাসীদের অনেকে হতাশ হয়ে বলছেন, এই সংকট সমাধানে সরকারের তরফ থেকে আরও দৃঢ়, কৌশলগত এবং দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।
বিশেষ করে প্রবাসীরা আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে বিষয়টি আমিরাত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধানে পৌঁছাবেন।
তাদের মতে, দেশের বাইরে কর্মরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা, কাজের সুযোগ, বৈধতা ও মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারেরই। এই প্রেক্ষাপটে প্রবাসীরা কূটনৈতিক উদ্যোগ আরও জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এদিকে, ভিসা জটিলতায় অনেক পরিবার দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রবাসীরা বলছেন, ইউএই-র মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে এ ধরনের সংকট চলতে থাকলে তা দেশের অর্থনীতি এবং প্রবাসী কল্যাণে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
তবে প্রবাসীরা বলছেন, এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে, হাজার হাজার বাংলাদেশির চাকরি, ভিসা, বসবাস ও ভবিষ্যৎ জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে।