বর্ষা এলেই জেগে ওঠে বাংলার নদী। কখনো শান্ত, কখনো উন্মাদ। আড়িয়াল খাঁ এবার তেমনি উথালপাথাল। ঢেউয়ের বুকে বাড়ছে স্রোতের তীব্রতা, আর সেই স্রোতের কামড়ে ধসে পড়ছে পাড়ের মাটি। মাদারীপুরের শিবচরের উৎরাইল-শিবচর সংযোগের ‘লিটন চৌধুরী সেতু’র গা ঘেঁষে যখন নদী গর্ত করে গিলে নিতে শুরু করেছে পাড়ের বুক, তখন শঙ্কার ছায়া নেমেছে পুরো জনপদজুড়ে।
যেখানে এক সময় বসে মানুষ নদীর শোভা দেখতো, স্রোতের তালে সেই স্থান এখন বিলীন। সেতুর একটি পিলার থেকে নদী ভাঙন আজ মাত্র একশ ফুটেরও কম দূরে। যেন নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে অদৃশ্য হুমকি।
নদীর পাড় ধসে পড়ছে একের পর এক। যেখানে ছিল সবুজ ঘাস, সেখানে এখন কাদা আর ঘূর্ণিস্রোত। একটি পুরোনো গাছ যেন বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেষপ্রহরের প্রহরী হয়ে, কিন্তু সেই গাছও আর কতকাল? নদীর কূলে এখন বাতাসও যেন থমকে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন—কয়েকদিন আগেও যে স্থান ছিল নিরাপদ, সেখানে আজ কেউ পা রাখে না। স্রোতের টানে মাটি আর পানি এখন একাকার। কেউ কেউ আক্ষেপ করে বলছেন, সেতু নির্মাণের আগেই যদি নদী শাসন হতো, আজ হয়তো এই আতঙ্কের মুখোমুখি হতে হতো না।
শিবচরের স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হবে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষায়, ব্যবস্থা নেয়া সময়সাপেক্ষ। এখানে ব্লক ফেলে নদী ঠেকাতে হবে, আর সেটি রাতারাতি সম্ভব নয়।
তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়—প্রকল্পের এত আয়োজন, এত ব্যয়, এত পরিকল্পনা—তবু কেন নদী শাসন ছিল না এই স্বপ্নের সেতুর পাড় ঘেঁষে? কেনো এতো দেরিতে চোখ খুলছে প্রশাসন?
নদী জানে না সেতুর ব্যয়ের অঙ্ক, জানে না মানুষের স্বপ্নের কথা। সে শুধু জানে, স্রোতের ডাকে মাটি ধসে যায়, জনপদ নেমে যায় পাঁকে। আর মানুষ? মানুষ শুধু তাকিয়ে দেখে—একদিন যেখানে সেতু ছিল, সেখানে হয়তো থাকবে শুধু নদীর কোল ঘেঁষা একরাশ বিস্ময়ের শূন্যতা।
শিবচরের ইউএনও পারভীন খানম বললেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’
মাদারীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্ত্তনীয় বলেন, ‘আমরা সেতুর ভাঙনে কবলিত এলাকায় দ্রুত লোক পাঠাবো। সরেজমিনে পরিদর্শন শেষ করে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হবে, যেন তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড মাদারীপুরের প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, ‘শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদের একাধিক স্থানে ইতিপূর্বে ভাঙন রোধে নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এই সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন। তারা আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে ভাঙন রোধের কাজ সময়সাপেক্ষ। এখানে ব্লক ফেলা ছাড়া ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়।’