পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া এবং নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর পাড়ে এক অভিযানে তিনজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈশ্বরদীর সাড়া ঘাট ও লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে মেহফুজ সোহাগ (৪০), ঈশ্বরদীর আরামবাড়িয়া গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি (৩০) এবং লালপুরের কাইগি মারির চর এলাকার ভাষানের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৫৫)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আটককৃতরা আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের অনুসারী।
অভিযানে তিনটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, দেশি রামদা, চাইনিজ কুড়াল, নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত স্টিমরোলার, গোলাবারুদ, পেন্সিডিল, ইয়াবা, গাঁজার গাছ, মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, একটি মাথার খুলি ও ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, নাটোরের ডিসি, সার্কেল এসপি, নৌ পুলিশ, থানার ওসি, টহল পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারার তালিকা সম্বলিত দুটি ভলিউম বই উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত তালিকা অনুযায়ী, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশকে মাসে ৪ লাখ টাকা, নাটোরের ডিসিকে মাসে এক লাখ টাকা, সার্কেল এসপিকে ৫০ হাজার টাকা, বাগাতিপাড়া থানার ওসিকে ২৫ হাজার টাকা, নাটোরের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিককে ২৫ হাজার টাকা এবং এশিয়ান টেলিভিশনের পায়েল হোসেন রিন্টুকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হতো।
বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, লালপুরের ‘কাকন বাহিনী’ পাবনার ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর এবং নাটোরের লালপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বালু মহলের নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।
আটক মেহফুজ সোহাগ ও বাপ্পি দাবি করেন, তারা সেখানে নৌকা চালান এবং ক্যাশিয়ারের কাজ করেন। তাদের ভাষ্যমতে, কাকন বাহিনী ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এবং সেখানে মাদক সেবন ও বিক্রি, অস্ত্র ব্যবসা এবং নারীদের নিয়ে এসে আনন্দ ফূর্তি করা হতো।
রাজশাহীর বাঘার বালু মহলের বৈধ ইজারাদার মিজানুর রহমান সরকার জানান, কাকন বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে জোরপূর্বক প্রতিটি নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করত।
নাটোরের লালপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিমুনজ্জান জানান, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশ এজাহার দিলে মামলার মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিদের নাটোরের কারাগারে পাঠানো হবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তবে, সার্কেল অফিসার ও দুই ওসির ব্যাপারে অভিযোগের প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈশ্বরদী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নির্মূলে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।