শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের কুলছরিপাতারচর এলাকায় পুকুরে ভেসে উঠা এক অজ্ঞাত যুবকের লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। লাশটি একই এলাকার শাজাহান ঢালীর ছেলে হানিফ ঢালীর (২৩) বলে নিশ্চিত করেছেন তার স্বজনরা।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে মাস্টার কবির হাওলাদারের পুকুরে লাশটি ভেসে উঠলে স্থানীয়রা গোসাইরহাট থানা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় গোসাইরহাট পৌর কবরস্থানে।
গোসাইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ননী গোপাল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবার থানায় গিয়ে মরদেহের পরনে থাকা গেঞ্জি, লুঙ্গি ও পায়ের চিহ্ন দেখে পরিচয় শনাক্ত করে।
এদিকে পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর নিহত হানিফের বাবা শাজাহান ঢালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাজল সরকারকে (২৪) প্রধান আসামি করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
হানিফের বাবা জানান, “১২ জুলাই বিকেলে কাজল সরকারসহ কয়েকজন লোক হানিফকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাতে সে বাসায় না ফিরলে ভেবেছিলাম আত্মীয় বাড়ি গেছে। কিন্তু ১৫ তারিখে লাশ ভেসে উঠলে সব পরিষ্কার হয়ে যায়।”
কুলছরিপাতারচরের বাসিন্দা কবির হাওলাদার বলেন, “হানিফ ভালো ছেলে ছিল, কিন্তু কাজল সরকার অনেক খারাপ লোক। কাজল ধরা পড়লেই বোঝা যাবে কারা জড়িত।”
অন্যদিকে স্থানীয় বাদল গাজী বলেন, “লাশের পরিচয় না পাওয়ায় আমি নিজ উদ্যোগে পোস্টমর্টেম খরচের ব্যবস্থা করি মানবিক কারণে।”
গোসাইরহাট থানার ওসি মাকসুদ আলম জানান, প্রধান আসামি কাজল সরকার ইতোমধ্যেই অন্য এক মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।
বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনকৃত মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো সেই অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে নিহত হানিফের পরিবার জানায়, হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর অর্থাৎ ১৮ জুলাই রাতে কিছু দুর্বৃত্ত কেরোসিন ও গ্যাসলাইট নিয়ে তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা রক্ষা পান।
গোসাইরহাট থানার ওসি মাকসুদ আলম বলেন, “নিহতের পরিবার হত্যা মামলা করেছে। মরদেহ উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে মরদেহ তুলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”