যৌতুক দিতে না পারায় বরগুনায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা ও দায়রা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার জাকিরতবক গ্রামের ছামেদ মীরার ছেলে মো. ছলেমান (৪১)। রায় ঘোষণার সময় তিনি পলাতক ছিলেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রনজুয়ারা শিপু।
বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরমাইঠা গ্রামের মৃত সিরাজুল হকের স্ত্রী পিয়ারা বেগম বাদী হয়ে ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে বরগুনা থানায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. ছলেমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
বাদীর মেয়ে লাকিকে ২০০৭ সালে ছলেমানের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকেই ছলেমান এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করে লাকিকে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এ বিষয়ে লাকি তার মাকে জানায়।
২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি লাকি ও তার স্বামী ছলেমান বাদীর বাড়িতে আসে। ১৮ জানুয়ারির সকালেও ছলেমান পুনরায় লাকির কাছে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুক দিতে অপারগতা জানালে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ছলেমান লাকিকে চড়-থাপ্পড় দেয়। এরপর সারাদিন তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলেনি।
সেদিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে ছলেমান তার স্ত্রী লাকিকে নিয়ে বাদীর ঘর থেকে বাইরে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ছলেমান একা ঘরে ফিরে আসে। তখন পিয়ারা বেগম তার মেয়ের খোঁজ করলে ছলেমান কিছুই বলেনি।
পরে লাকির মা প্রতিবেশী ফজলুর রহমানকে নিয়ে খোঁজে বের হন। রাত পৌনে ৭টার দিকে প্রতিবেশী খলিলের বাড়ির দক্ষিণ পাশে খড়কুটোর মধ্যে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় লাকির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পিয়ারা বেগম বলেন, তার স্বামী নেই। তিনি এবং তার মেয়ে লাকি ছলেমানকে যৌতুক দিতে না পারায়, সে ঠান্ডা মাথায় তার মেয়েকে তার পড়নের কাপড় দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেছে। তিনি লোকজন ডেকে ছলেমানকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। সে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল, পরে জামিনে গিয়ে পলাতক হয়। এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। তবে আরও বেশি খুশি হবেন যেদিন শুনবেন, ছলেমানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।