বরিশাল জেলায় মাদকাসক্তদের কারণে পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত তিনদিনেই মাদকসংশ্লিষ্ট দুইটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। আগের একটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সম্প্রতি বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভরপাশা এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। জাফর গাজীর একমাত্র ছেলে হাসান গাজী (২০) দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত ছিলেন। বাবা-মায়ের বারবার নিষেধ ও চেষ্টা সত্ত্বেও সে সংশোধন না হয়ে উল্টো তাদের ওপর নির্যাতন চালাতো।
গত ২৯ জুলাই দুপুরে মাদক সেবনের জন্য টাকা চেয়ে না পেয়ে সে প্রথমে ঘরে ভাঙচুর করে এবং এরপর বাবাকে মারধর শুরু করে। মা নাজমা বেগম বাধা দিতে এলে তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা ও মা মিলে লোহার পাইপ দিয়ে ছেলেকে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই হাসান মারা যায়। পরবর্তীতে জাফর গাজী ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম বাকেরগঞ্জ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ।
এর মাত্র দুই দিন আগে, ২৭ জুলাই বরিশালের উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম খাটিয়ালপাড়া গ্রামে মাদকের টাকার জন্য বাবা শাহ আলম খান (৬৫) কে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ছেলে শাহরিয়ার শিমুল (৩৫)। নিহত শাহ আলম স্থানীয় মৃত আব্দুর রহমান খানের ছেলে। এলাকাবাসী ঘটনাস্থল থেকে শিমুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। স্থানীয়দের দাবি, শিমুল মাদকের জন্য প্রায়ই তার বাবার ওপর নির্যাতন চালাতো। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উজিরপুর মডেল থানার ওসি আব্দুস সালাম।
এদিকে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় একটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গৌরনদী যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক স্বপন সরদারের ছেলে অনিম সরদার (২২) গত ২২ জুন রাতে একটি ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ গুরুতর আহত হয়ে পরদিন হাসপাতালে মারা যান। অনিমের পরিবার দাবি করেছে, দুর্ঘটনার দাবিকৃত স্থানে কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পরিবারের অভিযোগ, অনিমকে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনিম সরদার নিজেও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের আলোচিত ইয়াবা কারবারি হিরা মাঝির ঘনিষ্ঠ সহযোগী শাওন সরদারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এলাকাবাসীর ধারণা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকেই তাকে হত্যা করা হয়। যদিও এখনো পর্যন্ত পুলিশ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
গৌরনদী মডেল থানার সদ্য যোগদান করা ওসি মো. তরিকুল ইসলাম জানান, “ঘটনাটি আমার যোগদানের আগের, তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।”
বরিশালে একের পর এক মাদকসংশ্লিষ্ট মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয় সমাজে চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সচেতন মহল বলছেন, মাদকের বিস্তার ঠেকাতে না পারলে পরিবারগুলো আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজেরও সক্রিয় ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।