মিজানুর রহমান মুন্সী
জনাব আসিফ নজরুল স্যার,
আসসালামু ওয়ালাইকুম। দেশের দায়িত্ব নেয়ার আগে এবং পরে আপনার কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা থাকলেও যেহেতু আপনি রাষ্ট্রের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে আমাদের প্রবাসীদের জন্য অনেকগুলি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারমধ্যে কিছু কিছু কার্যক্রম সূর্যের আলো দেখলেও বাকিটা অন্ধকারে মুছে গেছে।
আপনি ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উৎসাহ দানে নানা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন এটা প্রশংসনীয় কিন্তু এয়ারপোর্ট এর ভিতর প্রবাসীদের জন্য যে লাউন্স করেছিলেন সেটা আমাদের কোন কাজেই আসেনা। অথচ সরকারি টাকা ব্যয় করে অযথা অপরিকল্পিতভাবে একটা প্রজেক্ট করেছিলেন বলে আমাদের অনেকেরই ধারনা।
আমরা যারা প্রবাসে থাকি তারা যখন দেশে যাই তখন আত্মীয়-স্বজন আপন জনদের মায়ার টানে কখন বের হব সেজন্য উদ্বিগ্ন থাকি। কখন আমরা আপনজনের স্পর্শ পাবো দেখা পাব এজন্য ব্যস্ত হয়ে যাই তাই আপনার এই প্রজেক্ট আমরা ব্যবহার করি না। এটা যখন করেছেন তখন হয়তোবা আমাদের মত দেশপ্রেমিক কোন প্রবাসীর সাথে আলোচনা না করেই করেছেন।
সম্প্রতি একটা খবরে দেখলাম আপনি সরকারের অর্থায়নে প্রবাসীদের জন্য একটা হাসপাতাল করবেন। এ উদ্যোগ অনেকেই হয়ত সানন্দে গ্রহণ করবেন কিন্তু আমি আপনার কাছে এর ভিন্ন মত প্রকাশ করছি। রাষ্ট্রের টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল করার আগে বুঝতে হবে আমরা যারা বিদেশে থাকি এদের জন্য মূল সমস্যা চিকিৎসা না অন্য কিছু?
আমরা যারা উন্নত বিশ্বে যেমন আমেরিকা ইউরোপ অস্ট্রেলিয়া কানাডা থাকি তাদের জন্য চিকিৎসা সংকট নয়। মধ্যপ্রাচ্য সহ অন্যান্য রাষ্ট্রে যারা থাকেন তাদের জন্য চিকিৎসাটা কিছুটা সমস্যা হলেও উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নয়। বিদেশে থাকা মানুষ গুলির মধ্যে আমরা কেউ দেশে গিয়ে চিকিৎসা করব কিংবা চিকিৎসা সেবা নেব এরকম সিচুয়েশন প্রবাসিদের প্রয়োজন হবে বলে আমি মনে করি না।
আমরা প্রবাসীরা আমাদের পরিজনদের ভালো রাখার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে যে সহযোগিতা বাংলাদেশে করি তাতে দেশের রিজার্ভে একটা বিশেষ অবদান আছে এটা যেমন সত্য তেমন আমাদের দেশপ্রেম আছে।
সেই দেশপ্রেম থেকে আমাদের চাওয়া দেশের অর্থ অপচয় না করে এই অর্থায়নে গরিবদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যারা অর্থকষ্টে বহির্বিশ্বে চিকিৎসা করতে পারেনা তাদের জন্য দেশীয় হাসপাতালগুলোকে উন্নত করে কার্যকর করার অনুরোধ রইল।
আমরা যারা প্রবাসে আছি তাদের জন্য বাংলাদেশের যতগুলি হাসপাতাল আছে এই হাসপাতাগুলোকে ফাংশনিক করা হোক। আমরা যখন দেশে যাব তখন যদি আমারা রোগ বেধিতে আক্রান্ত হই তাহলে যেন বিশেষ ইউনিটে আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এজন্য প্রবাসীদের জন্য যদি কিছু করতে চান তাহলে আমাদের একটা মেডিকেল কার্ডের ব্যবস্থা করবেন। যে মেডিকেল কার্ড থাকলে আমরা যেন দেশে বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারি। প্রত্যেক জেলা উপজেলাভিত্তিক সরকারি হাসপাতালে প্রবাসি ইউনিটের ব্যাবস্থা চালু করেন।
এজন্য বাংলাদেশে হাসপাতালগুলোকে ফাংশনাল করা জরুরি এবং উন্নত প্রযুক্তিতে ডাক্তার নার্স এদের আন্তরিকতা বৃদ্ধি করন দায়িত্বশীল আচরণ করার কোন কৌশল থাকলে সেই কৌশলের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হাসপাতালগুলোকে ফাংশনাল করা ডাক্তার নার্সদের মানবিক আচরণ করা চিকিৎসা ব্যবস্থা কে বাণিজ্যিকরণ না করা, ক্লিনিক গুলিকে আলাদা ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে আনা, তাহলে এ খাতে রাষ্ট্রের উপার্জন হবে এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। বিদেশে চিকিৎসা করানো প্রবণতা থেকে মানুষ দূরে থাকবে আর এতে করে দেশের টাকা বিদেশে চিকিৎসার নামে পাচার হবে না।
আমরা প্রবাসিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল চাই না। আমরা দেশের যে হাসপাতাল আছে তার ফাংশনাল বাস্তবায়ন চাই। কমুনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র শিশু ও মাতৃ সদন গুলো ফাংশনাল করার অনুরোধ করি।
আমরা প্রবাসীরা যেহেতু দুই তিন মাসের জন্য ছুটিতে যাই তখন আমরা অসুস্থ্য হলে আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরী চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সুব্যবস্থা করা। এ জন্য প্রবাসি মেডিকেল কার্ড দেয়া। চাইলে এই বিষয়ে আমরা আপনাকে পরামর্শ দিতে পারি। আমার এ লেখা যদি আপনার দৃষ্টিগোচর হয় তবে আমার এই অনুরোধ আপনার বিবেচনায় নিবেন বলে আমি আশা করি।
আপনার জন্য শুভকামনা।
ইতি,
মিজানুর রহমান মুন্সী
ইতালি প্রবাসি।