মিজানুর রহমান মুন্সী
জুলাই সনদ বাংলাদেশের একটি প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সনদ, যেখানে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবসমূহের তালিকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাক্ষর করার কথা রয়েছে। ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়ার ওপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শুরু থেকেই এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সোচ্চার। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, এই ঘোষণাপত্র না হলে ভবিষ্যতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে এতে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা বা এর মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এ অভ্যুত্থানের একটি স্বীকৃতি দরকার। এ কাজটিই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রশ্ন:—- ১,এই গভমেন্ট কি জুলাই সনদ ঘোষনা দিতে পারে?
২, এই গভমেন্ট কি বিপ্লবি গভমেন্ট?
এই গভমেন্ট যে সংবিধানের উপর দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছে তারা একটা মধ্যস্ততা কারি খণ্ডকালীন সরকার হতে পারে। আর সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে চালু রাখার জন্য একটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে খণ্ডকালীন সরকার পরিচালনা করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নিবে। কিন্তু ২৪ এর জুলাই আন্দোলনের নাম যদি বিপ্লব দেয়া হয় তা হলে বিপ্লবিরা সরকারের ভাগ নিতে সংবিধানের অধীনে শপথ নিল কেন?
আর যদি খন্ডকালীন সরকার হয় তা হলে রাষ্ট্রের সংস্কার তাদের একতিয়ারের বহির্ভূত। এ নিয়ে বিতর্ক কেন? যেহেতু সংস্কার হয় গণপ্রজাতন্ত্রের সংবিধানের আলোকে।
এই তর্ক বিতর্কে পার হয়ে গেল একটি বছর।
ডক্টর ইউনুস নির্বাচন এবং নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষনার পর রাষ্ট্রিয় হালুয়া রুটির ভাগের লড়াইতে রাজনৈতিক দলগুলো ভারত, আওয়ামিলীগ, জাতীয় পার্টি এ দেশের মাটি মানুষের রাজনীতি না করে পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারি দালালদের উপর উপ-দালালির ভুমিকায় অবতির্ন। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি।
ভারতের ঝুলানো মুলার পিছনে দৌড়ের প্রতিযোগিতায় ক্ষমতালোভী দলের নেতারা সকাল বিকাল মত পাল্টিয়ে বিভ্রান্ত বক্তব্য দিচ্ছে। এতে করে জনগণ এখন বিভ্রান্ত।
জুলাই সনদ নিয়ে জামায়াতের কর্মসূচি ঘোষণা স্ববিরোধিতার শামিল। তাই সর্বদাই প্রশ্ন থেকে যায় এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে?
এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে? নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে। নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে।
এ দিকে বি এন পির স্থায়ি কমিটির জরুরি সভায় তারেক রহমানের ভার্চুয়াল মিটিং এ নানা বিষয়ের উপর আলোচনা হলেও একটা বিষয় স্পষ্ট হয় যে বি এন পি নির্বাচনি প্রচারনায় মাঠে থাকবে।
কারন বিশ্লেশনে সাধারন দলিয় ভোটারগন পি আর পন্থী এবং জুলাই সনদ মেনে নিতে আন্দোলনের কর্মসূচির পালটা কর্মসূচি বি এন পির কাছ থেকে আশা করে। না হয় জামাত চরমোনাই সমমনা দলগুলো মাঠ দখলের মধ্য দিয়ে তাদের আধিপত্য প্রচার করবে।
জামাত এনসিপি অন্যান্য সমমননা দলগুলো জুলাই সনদ নিয়ে যতটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করছে তা ভারতের মুলার দিকে দৌড় মারার সমতুল্য।
রাজনীতিতে হতাশ কিংবা বিস্মিত হবার সুজোগ নেই। ভারত জামাতকে ক্ষমতায় বসাবার ইচ্ছা পোষণ করলে সেটাও অমূলক নয়। আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তাদের মন্দের ভালো এতে অসুবিধা নেই। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা বাংলাদেশের প্রধান শত্রু দেশ ভারত সেটা করার জন্য মরিয়া হইলেও করিতে চেষ্টা করিবে। তাই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে সেই খেলা খেলতে চেষ্টা চলছে।
এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। এই কথা ভেবে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐক্য জরুরী। তাদের মনে রাখা উচিত ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হলে সংসদে ইন্ডেমনিটি বিল এনে এ হত্যার বিচার হবে না নিশ্চিত করেছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুজিব হত্যার বিচারের কাঠগড়া এনেছিল এবং তাদের ফাসির মঞ্চে ঝুলানোর মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবের হত্যার বিচার করা হয়েছিল।
কথাটা কেনো উল্লেখ করলাম যে, যতই জুলাই সনাদের দাবি কিংবা অন্যান্য সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করে দেশে অরাজগতা সৃষ্টি করে আওয়ামিলীগে পুনর্বাসন করা পথ সুগম করে দিবে ততই দেশ এবং জুলাই যোদ্ধারা ঝুঁকির মুখে থাকবে। জুলাই সনদ দেয়ার পরেও এই জুলাই সনাদকে ভায়োলেন্স করে কাজ করতে পারবে যেটা ইনডেমিনিটি বিল ভায়োলেন্স করে মুজিব হত্যার বিচার করা হয়েছিল। তাই জামাত এবং জামাতের সহযোগী দলগুলির পূর্বের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।