আমতলীর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসী। রবিবার (১৩ জুলাই) উপজেলার খুরিয়া খেয়াঘাট সংলগ্ন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন ইউপি সদস্য মোঃ ফিরোজ খাঁন তাপস।
হামলাকারীরা এসময় পরিষদ চত্বরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলায় ইউপি সদস্য সোহেল খাঁনসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং ঘটনাস্থল থেকে ফিরোজ খাঁন তাপস ও তার সহযোগী রাসেল আকনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল ১০টার দিকে চেয়ারম্যান মিঠু ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নিয়মিত সেবা কার্যক্রম শুরু করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরোজ খাঁনের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক লোক সেখানে হানা দেয়। তারা চেয়ারম্যানকে টেনে-হেঁচড়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পরিষদে উপস্থিত সেবা প্রত্যাশী সাধারণ নারী-পুরুষ মানবপ্রাচীর তৈরি করে তাকে রক্ষা করে। বাধা দিতে গেলে ইউপি সদস্য সোহেল খাঁনসহ অনেকে মারধরের শিকার হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত নৌবাহিনীর একটি টহলদল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে আমতলী সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার (তালতলী-আমতলী সার্কেল) তারিকুল ইসলাম মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জুন চেয়ারম্যান মিঠুকে পরিষদে ঢুকতে বাধা দেন ফিরোজ খাঁন তাপস। ওই ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন চেয়ারম্যান, তবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি তার। পরে ১৯ জুন আমতলী উপজেলা পরিষদের সামনে একটি চায়ের দোকানে চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে ২১ দিনের জন্য দায়িত্ব হস্তান্তরের একটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন ফিরোজ খাঁন ও তার অনুসারীরা।
চেয়ারম্যান মিঠু বলেন, আজ আমি পরিষদে এসে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করলে তাপস তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে আমাকে তুলে নিতে চেষ্টা করে। পরিষদের সেবা নিতে আসা নারী-পুরুষ আমাকে মানবঢাল তৈরি করে রক্ষা করেন। না হলে ওরা আমাকে তুলে নিয়ে গুম বা হত্যা করে ফেলতো। তারা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
হামলায় আহতদের মধ্যে ইউপি সদস্য সোহেল খাঁন (৩৫), রাহাত মোল্লা (২৫), সজিব (২০), সাব্বির (২২), আল-আমিন (২৮) ও কামরুল (৩৫) রয়েছেন। তাদেরকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত সোহেল খাঁন ও রাহাত মোল্লাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) পাঠানো হয়েছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. লুনা বিনতে হক জানান, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত দু’জনকে বরিশাল পাঠানো হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, নৌবাহিনীর সদস্যরা দুইজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুটি ককটেল বিস্ফোরণের আলামত মিলেছে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। আটক দু’জনকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।