গত ছয়-সাত বছরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমানের নেতৃত্ব এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত করায় দেশের মানুষ তাকে ‘সাহস আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক’ হিসেবে দেখে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কৃষক দল আয়োজিত এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও স্লোগানের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় এই সমাবেশে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, কদিন ধরে দেখছি, কোনো কোনো দল ও ব্যক্তি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা বলছেন। আপনাদের এমন আচরণ দেশের জনগণ ভালো চোখে নেয়নি। বিএনপিসহ দেশের মানুষ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ভোটকেন্দ্র আবার ভোটারের পদধ্বনিতে মুখর হবে। জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ ভোট কেন্দ্রের যাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে।
এ সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতেই যে রক্ত, শহিদের আত্মদান, সেই ভোট পেছানোর ষড়যন্ত্র কেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোট পেছানোর কথা উঠছে কেন? এটা তো আজ গোটা জাতির প্রশ্ন। তাহলে নিশ্চয়ই ভেতরে ভেতরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
বিএনপির এই নেতা জানান, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি আসে, যা দেশের মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনেছিল। কিন্তু এই স্বস্তি কেউ কেউ চাচ্ছেন না বলে তার অভিযোগ। তিনি বলেন, তারপরই সারা দেশে শুরু হলো সংঘাত রক্তাক্ত পরিস্থিতি।
রাজধানীর মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে এর নিন্দা জানিয়েছে এবং জড়িতদের দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, ঘটনার পরপর চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিবৃতিসহ নিন্দা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, তারা যেখানেই থাকুক, যে অবস্থায় থাকুক।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, দলের নামে চাঁদাবাজি বা অন্যায় করলে সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যার মধ্যে বহিষ্কার বা পদ স্থগিত করার মতো পদক্ষেপও রয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশকে মামলা দায়েরের জন্যও বলা হচ্ছে। মিটফোর্ডের ঘটনায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার বিষয়টি তিনি কঠোরভাবে সমালোচনা করেন।
নারায়ণগঞ্জের মাফিয়া গডফাদার ও শেখ হাসিনার ‘রোষানলে পড়ে’ বেগম খালেদা জিয়া ছয়-সাত বছর ‘ভয়ংকর নিপীড়নের শিকার’ হয়েছেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরের মধ্যে যেখানে নিশ্বাস নেয়া যায় না, সেই ঘরের মধ্যে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখল শেখ হাসিনা।
তিনি তারেক রহমানকে ‘নিপীড়িত নির্যাতিতের এক প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে মিছিল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজেবাজে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলা হচ্ছে। তিনি খুলনায় বিএনপির যুবককে গুলি করে পায়ের রগ কেটে দেয়া এবং কক্সবাজারে বিএনপি কর্মী আব্দুর রহিমকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়ে কেউ কথা বলছে না।
রিজভী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের বলে উল্লেখ করে মিটফোর্ডের ঘটনায় জামায়াতের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, জামায়াত সরকার বা প্রশাসনকে কিছু না বলে ‘১৭-১৮ বছর লন্ডনে রয়েছেন’ এবং ‘শেখ হাসিনার নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার’ এমন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিছিল করছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যাকে (তারেক রহমান) ছাদের ওপর থেকে ফেলে দিয়ে কোমর ভেঙে ফেলা হয়। তার চেয়ে এ দেশে নির্যাতিত আর কে বেশি!’