মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেএলআইএ) টার্মিনাল-১ থেকে আবারও ৮০ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া।
এজেন্সি কাওয়ালান ডান পেরলিনডাঙ্গান সেম্পাদন-একেপিএস অর্থাৎ মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা গতকাল এক বিশেষ অভিযানে মোট ৯৯ জন বিদেশি কে ঢুকতে দেয়নি। কারণ হিসেবে তারা ইমিগ্রেশনের নিরাপত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারায় তাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি নিউজ এজেন্সি বারনামা।
দেশটির গণমাধ্যম সূত্রে আরো জানা গেছে, হাই রিস্ক সম্বলিত ফ্লাইটগুলোকে লক্ষ্য করে সাত ঘণ্টাব্যাপী একটি অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে ৪০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির ডকুমেন্ট বিস্তারিত তল্লাশি ও যাচাই-বাছাই করা হলে ৯৯ জন যাত্রীকে রিজেক্ট করা হয়।
বারনামার সংবাদ অনুযায়ী, যাদেরকে রিজেক্ট করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। এর মধ্যে ৮০ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া ১০ জন ভারতীয় এবং ৯ জন পাকিস্তানি নাগরিকও রয়েছেন। বারনামার বরাত দিয়ে দেশটির আরেকটি সংবাদ মাধ্যম নিউ স্ট্রেইটস টাইমস জানিয়েছে, ভ্রমণ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সন্দেহজনক হওয়ায় এবং ইমিগ্রেশন যাচাইয়ে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের প্রবেশা করতে দেওয়া হয়নি।
দেশটির গণমাধ্যমগুলো আরো জানিয়েছে, “একেপিএস বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আরও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, ট্রাভেল ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই এবং তাদের অতীত ভ্রমণের রেকর্ড পরীক্ষা।”
তবে কি ধরণের নথি চেক করা হয় তা বিস্তারিত জানতে বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলে জানাগেছে, “মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে। যেমন, যদি হোটেল বুকিং কনফার্মেশন না থাকে, অথবা বুকিংটি যাচাই করে ভুয়া প্রমাণিত হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার এন্ডোর্সমেন্ট না থাকলেও সমস্যা হয়, কারণ এতে বোঝা যায় আপনি নিজের খরচ বহন করতে পারবেন কি না। অনেকে হোটেল বুকিং দেখান পাঁচ দিনের, কিন্তু ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করেন মাত্র দুই দিনের খরচের মতো, এতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে। আবার অনেকে ফ্লাইট টিকিটের তারিখের সঙ্গে মিল না রেখে হোটেল বুকিং দেন অন্য তারিখে, এটাও সন্দেহের সৃষ্টি করে। এছাড়া, যদি কেউ ট্যুরিস্ট সেজে প্রবেশের চেষ্টা করে অথচ তার আচরণ, নথিপত্র বা ভ্রমণের কারণ পরিষ্কার না হয়, তবে তাকে ভুয়া পর্যটক হিসেবে গণ্য করা হয়। ডিপেন্ডেন্ট ভিসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে যদি স্ত্রীর স্বামীর বৈধ ভিসা না থাকে, অথবা স্ত্রীর পাসপোর্টে স্বামীর নাম ভুল থাকে, তবুও প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ইমিগ্রেশন অফিসার যদি কাউকে প্রশ্ন করেন—যেমন কোথায় থাকবেন, কার সঙ্গে দেখা করবেন, কতদিন থাকবেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছেন—এবং সেসব প্রশ্নের পরিষ্কার ও বিশ্বাসযোগ্য উত্তর না দিতে পারেন, তাহলে তার প্রবেশ আটকে দেওয়া হয়।”
কেন বারবার বাংলাদেশিদের বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাচ্ছে মালয়েশিয়া? এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, এটি মালয়েশিয়ার সমস্যা। কেন বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার দূতাবাস ভিসা দেওয়ার আগে তাদের ট্র্যাভেল ডকুমেন্টগুলো দেখে দিচ্ছেনা ? শুধু শুধু প্লেন টিকেটর টাকাগুলো নষ্ট হচ্ছে আর তারা হয়রানি হচ্ছে।”
সেক্ষেত্রে আমাদের কূটনীতির কোনো দুর্বলতার লক্ষণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি ইস্যু। এখানে আসার পরে এ ডকুমেন্ট নাই, ও ডকুমেন্ট নাই এসব কেন? কেন তারা ভিসা দেওয়ার আগে এগুলো দেখে দিচ্ছে না?
এদিকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বর্তমান আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এগুলোতো একটি প্রসেস। ঢাকা থেকেতো এগুলো এলাও করতেছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে আসার ক্ষেত্রে চেকিং করেইতো আসে।”
এ প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনের আরেক উর্ধতন কর্মকর্তা বর্তমান হাইকমিশনার মো: শামীম আহসানের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দিলে হাইকমিশনারের হোয়াটসআপে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। যদিও সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন মহাপরিচালকের সাথে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আসছেন।
এদিকে বারনামা মালয়েশিয়ার একেপিএস এর বরাত দিয়ে লিখেছে যে, মানব পাচার এবং সোশ্যাল ভিজিট ভিসার অপব্যবহার রোধে একটি সক্রিয় কৌশল হিসেবে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়মিতভাবে বাড়ানো হবে।