মিজানুর রহমান মুন্সী:
দীর্ঘ পনেরো ষোল বছর যাবত বাংলাদেশ কোন নির্বাচন হয়নাই। যে সকল নির্বাচন হয়েছে তা নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। আওয়ামিলীগ শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একবার ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। যেখানে একটা বিশেষ ষড়যন্ত্রকারি মহলের প্লান মাফিক নুরুকে ভিপি নির্বাচিত করেছিল।
অনেকেই হয়তো মনে করছেন এ দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের পালায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে এমন ধারণাটা হৃদয়ে লালন করা আমাদের সম্পূর্ণ ভুল। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসন আমলে বাংলাদেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের চরিত্র নষ্ট হয়েছে, তাইএটা মডিফাই করা অনেক সময়ের ব্যাপার। শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া সমস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে আমরা এখনো পরিচালিত।
স্বাধীনতার পর যতগুলি নির্বাচন বাংলাদেশে হয়েছে তা কখনো ফ্রি ফেয়ার হয় নাই, এমনকি জনগণ কিংবা ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো হয় নাই। অতএব আমরা রাতারাতি জাতি হিসেবে ফেরেস্তা হয়ে যাব এটা ভাবার কোন সুযোগ নেই।
আমি যদি পূর্বের ইতিহাসের রেফারেন্স ধরে এই ডাকসু নির্বাচনের কথাও বলি যে এই নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়েছে এবং ষড়যন্ত্রকারীরা জিতেছে তাহলে অমূলক হবে বলে আমি মনে করি না।
এবার আসি জুলাই আগস্টের আন্দোলনের পর বাংলাদেশে ডাকসু নির্বাচনে প্রথম, আর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ নির্বাচনের প্রতি দৃষ্টি ছিল সারা বিশ্বের। ডাকসু নির্বাচনের ভূমিধস জামাতের বিজয় সারা দেশের মানুষকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। সকল মানুষের একই প্রশ্ন কিভাবে জামাত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করল? যদি আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে চাই তাহলে প্রথম উত্তরে বিজয়কে অকল্পনীয় হিসাবে জাতিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি সমাজনীতি ভৌগোলিক অবস্থান এখন বহির্বিশ্বের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানে আমেরিকা চিন এবং ভারতের রাজনীতির সমিকরনে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সাদামাটা ভাবে যদি আমরা জামাতের ভূমিধস বিজয়ের কথা ভাবি তাহলে জামাত আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে এই নির্বাচনের ফলাফল তাদের ঘরে নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী শুধু বিএনপি জামাত করে না এখানেও আআওয়ামিলীগ এর একটা বড় অংশ অধ্যায়নরত। যেহেতু নির্বাচন করে না তাহলে তাদের ভোট কোথায় গেল? এটা নিশ্চিত যে আওয়ামীলিগ জামাতকে ভোট দিয়েছে। এর সর্ব সম্মিলিত ভোটেই জামাতের প্রার্থী পাস করেছে। এখানে অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে আওয়ামী লীগ জামাতকে কিভাবে ভোট দেয় নীতিগত তাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। রাজনীতির শেষ বলে কিছু নেই তাই কৌশলগত কারণে তারা এ সমঝতায় আসাটা রাজনীতিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা আদর্শে পার্থক্য থাকলেও ক্ষমতার একটা সমঝোতা থাকে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে এবং সোসাল মিডিয়ার কল্যানে জামাতের টাকার ব্যবহারের কথা শোনা যাচ্ছে। সেখানে টাকা এবং ক্ষমতার সমঝোতা দুটোই আওয়ামী লীগ জামাতকে প্রভাবিত করেছে। যার ফলশ্রুতিতে জামাতের নিরঙ্কুশ বিজয়।
কথায় আছে ; দায় ঠেকলে বুড়া গরুও বাঁশের সাঁকো পার হয়। নীতির মিল না হলেও আওয়ামিলীগ এবং জামাত সে কাজটাই করেছে।
বিশ্লেশনের বিষয় হলো!
আওয়ামিলীগ এবং জামাত কেন সমঝোতায় আসলো? এই সমঝোতার পিছনের নেপথ্যে কোন অপশক্তি ছিল?
একটু চিন্তা করলেই এর উত্তর সহজ হয়ে যাবে।
প্রথমত এই নেগোসিয়েশন এ ভারতের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
যেমন:-
আমেরিকা বি এন পিকে চায়।
ভারত বি এন পিকে চায়। তা হলে জামাত ভারতের সত্রু।পশ্চিমা বিশ্ব জামাতকে চায়না। এটা রাজনৈতিক সহজ হিসাব।
কিন্তু প্রান প্রিয় বন্ধু দল আওয়ামিলীগ কি ভাবে ইন করবে?
সে ক্ষেত্রে খেলাটা হলো ভারতের এরকম;
সকল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংসদ ছাত্রলীগের সমর্থনে জামাত জিতবে আর জামাতের এই আতাত মাঠে প্রচার হবে যা জাতীয় রাজনীতিতে জামাত জনমনে ৭১ এর রাজাকার চব্বিশের জুলাইয়ের অর্জন সব একাকার করে জনমনে দালাল বিশ্বাসঘাতক হিসেবে তাদের মাঠে পরিচয় করিয়ে দিবে।
দ্বিতীয়তঃ জামাত তাহলে ভারত বিরোধী হলেও প্রকাশ্যে বিরোধিতা করবে না, কারণ জামাতের রক্ত তারা চিনে। এইজন্য ভারতের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা পি আর পদ্ধতি এই জামাত দিয়ে মাঠে প্রচার করতে চেয়েছিল সেটা যখন মাঠে তেমন স্টাবলিশ করাইতে পারে নাই। এখন এ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তারা মাঠে জামাতকে বিতর্কিত করে দেবে এইজন্যই তাদের বন্ধু দল আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে নতুন রাজনৈতিক কৌশল পাল্টিয়ে দিয়েছে।
তাহলে আমরা তৃতীয় হিসেবে যাই : ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আরেকটা ট্রাম কার্ড হলো জাতীয় পার্টি যেটা প্রয়োজন বোধে বিএনপিকে ব্যবহার করবে। যদি জামাতকে বিতর্কের স্ট্যাবলিসমেন্ট এর চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছাতে পারে।
এখন আমরা হিসাব মিলাই; জামাতকে বিতর্কিত করা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংসদের জিতে যাবার আনন্দে জামাত সেদিকে মনোনিবেশ করে থাকবে।
জাতীয় পার্টি কে ট্রাম কার্ড হিসেবে রেখে মুলার মতো ঝুলিয়ে জামাত এবং বি এন পির মুখের সামনে রাখবে।
ভারতের রাজনীতিতে মন্দের ভালো বিএনপি। তাই তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সমস্ত খেলায় খেলবে। আমেরিকা মৌলবাদ বিরোধী হওয়ায়, চাইবে না জামাত ক্ষমতায় আসুক।
তাহলে জামাতের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় এনে এই যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামাত এবং আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ করে বিএনপিকে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনভাবে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পরে জামাত আওয়ামিলীগ মিলে বিএনপি’র বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে আন্দোলন করে বি এন পিকে ক্ষমতাচ্যুত করাবে এরপরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আবার অবস্থান করবে এবং পূর্বের রাজনীতি ফিরে আসবে।
*তাহলে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী এন সি পি কি করবে?
এনসিপির প্রধান শত্রু বি এনপি নয় তাদের প্রধান শত্রু আওয়ামিলীগ।
জামাত যদি আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে তাহলে এনসিপির উচিত হবে বিএনপির সাথে থাকা আর না হলে ভবিষ্যতে তাদের কোনও সেইভের জায়গা থাকবে না। তারা বিপদগ্রস্ত হবে।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সর্বক্ষণেই দিমুখী আচরণ করে থাকেন। যেমন ডাকসু নির্বাচনে জগন্নাথ হলে বিএনপিকে জয়লাভ করানো হয়েছে। এখানে হিন্দু ছাত্ররা থাকে। সেক্ষেত্রে জাতিকে আই ওয়াস করানোর জন্য এই পলিসি মেনটেন করেছেন। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় জামাতকে বিতর্কের স্থানে রেখেছে মানে তাদের ভাষায় জামাত ইসলাম একটা মুসলিম মৌলবাদী দল।নির্বাচনে ধর্মিয় কারনে জামাত পরাজিত।
এখানে আগামীতে প্রমাণ রাখার জন্য ইচ্ছেকৃতভাবে এই পয়েন্টটা তাদের হাতে সাক্ষি স্বরূপ রেখেছে।
এতকিছু বিশ্লেষণের পর একটাই প্রশ্ন তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে তার ক্ষমতা কিভাবে টিকিয়ে রাখবে?
সেখানে বিএনপি’র সর্বোচ্চ গার্ডিয়ান জনাব তারেক রহমানের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মানস্বরূপ দুটো পরামর্শ ;
১, আমি যেহেতু বরিশালের মানুষ বরিশালের রাজনীতি নিয়ে আমার কিছু ধারনা আছে সেই ধারণা এবং অভিজ্ঞতার লক্ষে আমি মনে করি যে বরিশালের যে পুরনো কমিটি গুলি আছে এই কমিটিগুলি নির্বাচনের আগে রিভিউ অথবা পুনর্গঠন করা হোক। যদি সেই কমিটি পুনর্গঠন করা না হয়, তাহলে পুরনো কমিটি দিয়ে বিভাজন দূর করা সম্ভব হবে না। আর জাতীয়তাবাদী দলের বিভাজনকে নিরসন না করতে পারলে এই সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা সেখানে বাসা বেঁধে বসবে হারাতে হবে বরিশালের চারটা আসন। পুনর্বাসন হবে আওয়ামিলীগ।
এজন্য প্রবাসীদের পক্ষ থেকে সৎ আদর্শ নির্লভী দল প্রেমিক লোকদের সংগ্রহ করে তাদের দায়িত্ব দিতে পারেন।
এই নেরেটিভটা সারা বাংলাদেশের জন্য ষ্টাবিলিস করা জরুরি।
দীর্ঘ পনেরো ষোল বছরে যারা বাচ্চা থেকে বালেগ হয়ে ভোটার হয়েছে তারা বি এন পির বাস্তবতার ভালোর দিক জানে না। এই না জানার বড় প্রতিবন্ধকতা ছিলো হাসিনা। এমন শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন যেখানে কোন বিরোধী মুক্ত মত ছিল না। পাচই আগষ্টের পর ছাত্রদল থেকে শুরু করে সমস্ত দলিয় অংগ সংগঠনের মাধ্যমে দল এবং দলের মুল আদর্শ লক্ষ্য প্রচার করা।কিন্তু তা না করে দলের আদর্শ বিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ায় আজ এই পরিনতির দিকে বি এন পির যাত্রা।